Sunday, December 24, 2017
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পদক ও পতাকা
এ বছর আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশ দল ফিরেছে চারটি পদক নিয়ে। দেশের পতাকা উড়িয়ে, পদক জয়ের অভিজ্ঞতা লিখেছেন দলের সঙ্গী ইবরাহিম মুদ্দাসসের
আবহাওয়া বার্তা বলছিল, আমরা যখন নেদারল্যান্ডসে পৌঁছাব তখন সেখানে তাপমাত্রা থাকবে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দু-এক দিন পরে পাব শূন্য ডিগ্রি। ভাগ্যে থাকলে দেখা দেবে তুষারপাতও। আর বৃষ্টি হবে যখন-তখন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের ১০ সদস্যের জন্য বিষয়টা দুশ্চিন্তার বটে। কিন্তু আমরা যাচ্ছি আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে (আইজেএসও) বাংলাদেশকে তুলে ধরতে। শীতের ভয়ে কাবু হলে চলবে কেন?
ঠান্ডাকে জয় করতে ভারী জ্যাকেট, কয়েক প্রস্থ কাপড়, হাত মোজা, কানটুপি, মাফলার ইত্যাদি লাগেজ ভর্তি করে আমরা ঢাকা ছাড়লাম ২ ডিসেম্বর বিকেলে। আমাদের দলে আছে বাংলাদেশ দলের ছয় শিক্ষার্থী। নটর ডেম কলেজের এ কে এম সাদমান মাহমুদ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের আহমেদ নাফিস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের রুবাইয়াত জালাল, বরিশাল জিলা স্কুলের ইমতিয়াজ তানভির, নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের মুয়াম্বার সারোয়ার এবং মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের আবসার খান। দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বুয়েটের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। দলনেতা হিসেবে আছেন বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক বায়েজিদ ভূঁইয়া ও আমি। পর্যবেক্ষক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী। আইজেএসওর জন্য এই দলটি নির্বাচন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। সহযোগী হিসেবে ছিল প্রথম আলো এবং ম্যাগাজিন পার্টনার বিজ্ঞানচিন্তা।
কাতারের দোহায় লম্বা যাত্রাবিরতি দিয়ে আমস্টারডামের স্কিফল বিমানবন্দরে আমরা নামলাম ৩ তারিখ দুপুরে। মেঘে ঢাকা আকাশ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি, কুয়াশাও আছে। সব মিলিয়ে আমাদের অপরিচিত আবহাওয়া। এর মধ্যেই যাত্রা শুরু হলো আর্নহেম শহরের দিকে।
আর্নহেম শহরের পাপেন্ডাল হোটেলে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এখানে থাকবে শিক্ষার্থীরা। অলিম্পিয়াডের জন্য এই হোটেলকে বলা যায় আদর্শ। এখানেই অবস্থিত হল্যান্ডের ন্যাশনাল স্পোর্টস সেন্টার। অলিম্পিকে যাওয়া সব অ্যাথলেট প্রশিক্ষণ নেয় এখানেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে রুমগুলোতে থাকবে, কিছুদিন আগেই হয়তো সে রুমে থেকে গেছে অলিম্পিকে পদকজয়ী কোনো অ্যাথলেট।
দলনেতা আর পর্যবেক্ষকদের থাকার জায়গা হলো জার্মান বর্ডারের খুব কাছের এক হোটেলে। সকালে সূর্য ওঠে পৌনে আটটায়, আবার সোয়া চারটায় ডুবেও যায়। কাজ শুরু হয়ে যায় রাতের অন্ধকারে। পরদিন তাই আমাদের বেরিয়ে পড়তে হলো সাতটার মধ্যে। চারপাশ অন্ধকার। আমরা যাত্রা করলাম হোটেল পাপেন্ডালের উদ্দেশে। সেখানেই হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনীর শুরুতে সব দেশের একজন করে অংশগ্রহণকারী দেশের পতাকা নিয়ে হাঁটল। অর্ধশত দেশের পতাকার মধ্যে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা তুলে ধরল সাদমান মাহমুদ।
এবারের আইজেএসওর থিম ছিল ‘ওয়াটার অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাই পানির জয়গান। নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হলো কয়েকবার। আমাদের পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র যে এই অঞ্চলের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত, তা বেশ বোঝা গেল। উদ্বোধনীর পর থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদেরসহ বাইরের সব যোগাযোগ বন্ধ। তাদের সঙ্গে নেই কোনো মোবাইল। আইজেএসও শেষ হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা যেন সময়টা নিজেদের মধ্যে কাটাতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা।
শিক্ষার্থীদের তাদের মেন্টরের কাছে রেখে আমরা চলে গেলাম রেডবাউড বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্য দেশের দলনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দিলাম। প্রথমে যৌথ আলোচনা শেষে আমাদের হাতে দেওয়া হলো পরের দিনের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের সব প্রশ্নই সাজানো হয়েছে পানিকে ঘিরে। প্রশ্ন দেখে বুঝলাম, সারা দেশ থেকে বাছাই করা আমাদের ছয় শিক্ষার্থী তিন মাস ধরে বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের একাডেমিক দলের নিবিড় পর্যবেক্ষণে যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তাতে আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। প্রশ্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলো তিনটা আলাদা রুমে। আমরাও যোগ দিলাম সে আলোচনায়। কোনো কোনো প্রশ্ন নিয়ে অনেক দেশের দলনেতা ভিন্ন মত দিলেন। কিছু সমস্যার সমাধান হলো। আবার কিছু সিদ্ধান্তের জন্য ভোটাভুটি লাগল। এই পর্ব শেষ হতে হতেই রাত হলো।
আইজেএসওর রুটিনে একটা ব্যাপার ধরাবাঁধা। একদিন শিক্ষার্থীরা ঘুরে বেড়ায়, দলনেতারা প্রশ্ন যাচাই-বাছাই করে। পরদিন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়, দলনেতারা ঘুরে বেড়ায়। ৬ তারিখেও তা-ই হলো। শিক্ষার্থীরা ঘুরে বেড়াল। একটা স্কুলে গিয়ে দেখল এখানকার পড়াশোনা। পদার্থবিজ্ঞান আর গণিতের একটা করে ক্লাসও করে এল। আর আমাদের সময় কাটল প্রশ্ন নিয়ে। ৭ ও ৮ তারিখে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, আমাদের ঘোরাফেরার পালা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, রটরডেম, আমস্টারডাম ঘুরে সময়টা বেশ ভালো কাটল।
১০ তারিখ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হলো। আমাদের শিক্ষার্থীদের খাতা দেখল স্থানীয় আয়োজকদের সায়েন্টিফিক কমিটি। উত্তরপত্রের একটা কপি দেওয়া হলো আমাদের। কিছু জায়গায় মনে হলো আমরা আরও কিছু নম্বর পেতে পারি। কমিটির সঙ্গে ‘দর-কষাকষিতে’ কিছু নম্বর যোগ হলো। পরে দেখা গেছে, এই নম্বর বাড়াতে পারায় আমাদের ঝুলিতে এসেছে একটা রৌপ্য পদক।
১১ ডিসেম্বর দুপুরে গেলাম আর্নহেমের সবচেয়ে বড় কনসার্ট হলে, সমাপনী পর্বে যোগ দিতে। শিক্ষার্থীরা পৌঁছে গেছে আমাদের আগেই। বর্ণানুক্রমে আসন হওয়ায় বাংলাদেশ দল জায়গা পেয়েছিল মঞ্চের সামনে। বক্তৃতা, গান আর নাচে জমে থাকে পুরো অনুষ্ঠান। সবশেষে হয় পদক বিতরণ। শুরুতেই দেওয়া হয় ব্রোঞ্জ পদক। বাংলাদেশ দল থেকে ব্রোঞ্জ পায় তিনজন—আহমেদ নাফিস, রুবাইয়াত জালাল ও ইমতিয়াজ তানভীর। ওরা তিনজন মঞ্চে ওঠে আমাদের লাল–সবুজ পতাকা নিয়ে। বিশ্বমঞ্চে বিজয়ের মাসে আমাদের পতাকা দেখে আমরা সবাই আবেগাপ্লুত হই।
এরপর ঘোষিত হয় রৌপ্য পদকজয়ীদের নাম। বাংলাদেশ দল থেকে রৌপ্য পদক জেতে আবসার খান। নাফিস আর রুবাইয়াতের সঙ্গে সিয়ামের নম্বর ব্যবধান ছিল খুবই কম। আমরা বুঝতে পার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Wikipedia
Search results
Popular Posts
-
Human Rights Watch has accused the Jordanian government of summarily deporting hundreds of registered Syrian refugees, despite the poss...
-
Three US geneticists - Jeffrey Hall, Michael Rosbash and Michael Young - have been awarded the Nobel Medicine Prize for shedding lig...
-
Palestinian Authority Prime Minister Rami Hamdallah arrived in the occupied Gaza Strip on Monday, in the latest effort at national reco...
-
Islamic State has claimed responsibility for a shooting that killed at least 50 people and wounded over 400 in Las Vegas early on Mond...
-
চোখের কৃমি লোয়া লোয়া। ফিতের মতো দেখতে। গায়ের বর্ণ সাদা। প্রাণীদেহে পরজীবী হিসেবে বসবাসকারী এমন দীর্ঘ কৃমি সচরাচর দেখা যায় না। নামে চোখের ...
-
ষাটের দশকের কথা। তখন ছিল বাদশাহ্ খালেদের শাসনামল। ওই সময় আধুনিক যন্ত্রপাতির দিয়ে পরিষ্কার কারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জম জম কূপটি। জম...
No comments:
Post a Comment