Sunday, December 24, 2017
শনাক্ত হচ্ছে না প্রকৃত অপরাধীরা
ফেসবুক পোস্টে ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয়েছে—এই হুজুগ তুলে সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু কক্সবাজারের রামু থেকে। ২০১২ সালে ওই সহিংসতার পর প্রায় প্রতিবছর একই কায়দায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অন্তত নয়টি বড় হামলা হয়েছে। কোথাও ভুয়া ফেসবুক পরিচিতি (আইডি) থেকে, কোথাও লেখাপড়া না জানা অন্যের আইডি থেকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ঘটনায়ও পুলিশ প্রকৃত অপরাধী, অর্থাৎ ফেসবুকে উসকানিদাতাকে শনাক্ত করতে পারেনি।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের সক্ষমতা বা সদিচ্ছার অভাবে প্রকৃত অপরাধীরা শনাক্ত হচ্ছে না। পুলিশের কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এই মামলার শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরীহ লোকজনও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম) সহেলী ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের মামলা করে পুলিশ মাঝেমধ্যে বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, ভুয়া আইডি থেকে নেতিবাচক পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে। তখন পুলিশের কিছুই করার থাকছে না।
পুলিশের এই ‘অসহায়ত্বের’ সুযোগে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ওপর ভয়ংকর হামলাটি হয় ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। অভিযোগ ছিল, রামুর মেরুংলোয়া বড়ুয়াপাড়ার বাসিন্দা উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেসবুক আইডিতে পবিত্র কোরআন অবমাননা করে একটি পোস্ট ট্যাগ করা হয়। তিনি তাতে লাইক দেন মাত্র। রামু থেকে পরে ওই সহিংসতা উখিয়া ও টেকনাফ পর্যন্ত ছড়ায়। নিহত হন একজন। পুড়িয়ে দেওয়া হয় শত বছরের পুরোনো বৌদ্ধমন্দির ও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একটি মন্দির। সন্ত্রাসীরা বৌদ্ধপল্লির ৪০টির মতো বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পাঁচ বছর পরও পুলিশ জানতে পারেনি আসলে কে ওই পোস্টে উত্তম কুমার বড়ুয়াকে ট্যাগ করেছিলেন। উত্তমই ওই পোস্টে আসলে লাইক দিয়েছিলেন, নাকি তাঁর আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অন্য কেউ কাজটি করেছিলেন, সে ব্যাপারেও পুলিশ কিছু জানতে পারেনি। ওই সময়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ছিলেন সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সন্দেহভাজন আসামিদের কম্পিউটার, মুঠোফোন সিআইডিতে পাঠিয়েছিল। ওই সব উপাদান থেকে আসামি শনাক্ত করার মতো কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।
রামুতে ওই হামলা শুরু হলে ওই রাতে বাড়ি ছেড়ে পালান পেশায় দলিল লেখক-সহকারী উত্তম বড়ুয়া। তাঁর স্ত্রী রিটা বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, উত্তমের পরনে সেই রাতে শুধু একটি লুঙ্গি ছিল আর হাতে ছিল মোবাইল ফোন। সেই যে বাড়ি ছাড়লেন, আর ফিরে আসেননি। আজ পর্যন্ত কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার এক বছর পর ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তি করা হয়েছে—এই গুজব ছড়িয়ে
পাবনার আতাইকুলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। ওই দিন ছিল কালীপূজা। অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সে স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র, বনগ্রাম বাজারের দোকানমালিক বাবলু সাহার একমাত্র ছেলে। ঘটনার দিন তাঁর ছেলে ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি করেছে অভিযোগে এলাকায় ত্রিমুখী হামলা হয়। একদল বাজারে মিছিল বের করে, একদল পাবনা-নগরবাড়ী সড়কে কাঠের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়, অন্য দলটি লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হিন্দুবাড়ি ও মন্দিরগুলোতে হামলা চালায়।
বাবলু সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তাঁর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। সন্ত্রাসীরা তাঁর বাড়িতে আগুন দেয় এবং দোকান লুট করে। হাইকোর্ট থেকে পরে সরকারকে ৪৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়, যদিও ওই টাকা তিনি এখনো পাননি।
এ ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অভিযুক্ত কিশোরকে আইনি সহায়তা দেয় আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ যাচাইয়ে পুলিশ ওই কিশোরের কম্পিউটার ও মুঠোফোন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের (বিটিআরসি) কাছে পাঠিয়েছিল। অভিযোগের সত্যতা না থাকায় পরে ওই কিশোর মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।
দুই সংখ্যালঘু তরুণ ইসলাম ধর্ম অবমাননা করেছে—এমন অভিযোগ তুলে কুমিল্লার হোমনায় বাগসিতারামপুরের জেলেপাড়ায় হামলা হয় ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি মাদ্রাসার দুজন কট্টরপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে হামলা চালান। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নঈম মোল্লা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
নঈম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, শেষ পর্যন্ত জেলেপাড়ার ওই দুই সংখ্যালঘু তরুণ ইসলাম ধর্ম অবমাননা করেছেন—এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
গত বছরের ২৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের লেখাপড়া না জানা জেলে রসরাজের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা হয়। রসরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফরেনসিক ল্যাবের প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়, রসরাজ ওই ফেসবুক পোস্ট দেননি। এর আগেই রসরাজকে সাড়ে তিন মাস জেল খাটতে হয়।
নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় করা আট মামলার মধ্যে একটির অভিযোগপত্র গত ১১ ডিসেম্বর আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। তাতে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু ফেসবুকে কে ওই ধর্মীয় অবমাননার পোস্ট ছড়াল, সে বিষয়ে অভিযোগপত্রে কিছু বলা হয়নি। পুলিশ বলছে, ওই ঘটনায় আইসিটি আইনে একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলার তদন্তে ফেসবুকের পোস্টের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ওই মামলায় রসরাজও আসামি।
ফরিদপুরের কৃষ্ণ কুমার মালো শুরু থেকেই বলেছেন, তাঁর নামে অন্য কেউ একটি আইডি খুলেছে। তিনি তাঁর প্রকৃত আইডি কোনটি, সে কথাও বারবার জানিয়েছেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ভুয়া আইডি থেকে ছবি পোস্ট করে প্রচারের কাজ করেছে দুর্বৃত্তরা আর জেলে যেতে হয়েছে কৃষ্ণ কুমার মালোকে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিনা অপরাধে মানুষ সাজা খাটবে কেন? তার বিরুদ্ধে মামলাই বা হবে কেন? যেখানে দেখা যাচ্ছে,
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Wikipedia
Search results
Popular Posts
-
Human Rights Watch has accused the Jordanian government of summarily deporting hundreds of registered Syrian refugees, despite the poss...
-
Three US geneticists - Jeffrey Hall, Michael Rosbash and Michael Young - have been awarded the Nobel Medicine Prize for shedding lig...
-
Palestinian Authority Prime Minister Rami Hamdallah arrived in the occupied Gaza Strip on Monday, in the latest effort at national reco...
-
Islamic State has claimed responsibility for a shooting that killed at least 50 people and wounded over 400 in Las Vegas early on Mond...
-
চোখের কৃমি লোয়া লোয়া। ফিতের মতো দেখতে। গায়ের বর্ণ সাদা। প্রাণীদেহে পরজীবী হিসেবে বসবাসকারী এমন দীর্ঘ কৃমি সচরাচর দেখা যায় না। নামে চোখের ...
-
ষাটের দশকের কথা। তখন ছিল বাদশাহ্ খালেদের শাসনামল। ওই সময় আধুনিক যন্ত্রপাতির দিয়ে পরিষ্কার কারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জম জম কূপটি। জম...
No comments:
Post a Comment