Sunday, December 24, 2017
বায়ুদূষণ ও শরীর পাতন
হেমন্ত পেরিয়েশীত এসেছে। তবে আবহাওয়ার বেয়াড়াপনায় শীতের অনুভূতি তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে মানুষের সর্দি-কাশি লাগতে দেখা যায়। তো চিকিৎসকেরা বলেন, এই সময়ে ধুলাবালি পরিহার করতে হবে। দরজা জানালা খুলে রাখতে হবে। মানে ঘরে নির্মল বায়ু ঢোকার ব্যবস্থা করা আরকি। চিকিৎসকদের এ ধরনের পরামর্শে ঢাকা শহরের যেকোনো বাসিন্দা হয়তো আহাম্মক বনে যেতে পারেন। মনে মনে হয়তো চিকিৎসকেরাও জানেন, এ ধরনের পরামর্শ দেওয়া কতটা অর্থহীন।
নির্মল বায়ু ঢাকা শহরে এখন সোনার হরিণ। নির্মল নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা এই শহরে কোথাও নেই। তবে শীতকাল এলে তা আরও দুর্লভ হয়ে যায়। ঢাকার রাস্তায় কোথাও এক ফোঁটা জায়গা নেই, যেখানে আরাধ্য ‘নির্মল’ বায়ুর খোঁজ মেলে। সে হোক মহাসড়ক বা পাড়ার কোনো গলি। রাজধানী ঢাকার বাইরেও এর চেয়ে অবস্থা খুব একটা ভালো না। দেশের অন্যান্য শহরেও ধুলায় ধূসরিত সব রাস্তা।
বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন, নিয়মনীতিহীন আবাসন ও নির্মাণ খাতের বিস্তার, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে যথেচ্ছ রাস্তা খোঁড়া, যানবাহনের সংখ্যা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের আধিক্য ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। তার মানে সমস্যার কারণ আমাদের জানা। তবু সমাধানে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যার ব্যাপারে বারবার সতর্কবাণী দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে বলে
আমরা জানি। ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি ২০১৭’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বায়ুদূষণে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট।
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের বিপন্নতার চিত্র বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে। তারপরও এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদ্যোগ নিতে দেরি করা হচ্ছে। সর্বশেষ জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের ‘ডেঞ্জার ইন দ্য এয়ার’ নামক একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের মস্তিষ্ক স্থায়ীভাবে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি ধুলার জন্ম নিয়মনীতিবিহীন আবাসন ও নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কারণে। যথেচ্ছাচার ইট-বালুর স্তূপ রাস্তার ধারে ফেলা রাখা হচ্ছে। তা থেকে ধুলা উৎপন্ন হচ্ছে। বাসাবাড়ির গলিতেও একই অবস্থা। যেখানে নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে, সেখানেই ধুলার সাগর। আমি যেখানে থাকি সেই ভবনের পাশে নতুন দুটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। যথারীতি বালুর স্তূপ রাস্তায় গড়িয়ে চলছে বহুদূর পর্যন্ত। আশপাশের সব বাসাবাড়ি ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে। এই চিত্র সব জায়গায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হবে, কংক্রিটের নগরে মাটির ছোঁয়া দিতেই এই ব্যবস্থা। শহরে গ্রামীণ আবহ, সে তো ভালো কথা! কিন্তু নাগরিক জীবনে যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা সৃষ্টি করছে এই ধুলা, তা আর গ্রামীণ থাকছে না। অবস্থা এখন গ্রাম্যতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অথচ ভবন নির্মাণের নির্ধারিত নিয়ম আছে। ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি এবং নিরাপত্তা বিধি মেনে এ ধরনের কাজ করার কথা বলা হয়েছে। নির্মাণস্থল এবং তার চারপাশে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। নির্মাণকাজের মাধ্যমে জনসাধারণের কোনো ধরনের বাধা, বিপত্তি বা অসুবিধা সৃষ্টি না করার বিধি রয়েছে। আবাসিক এলাকায় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত নির্মাণকাজের মাধ্যমে কোনো আওয়াজ যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি দিন বা রাতের কোনো সময়েই নির্মাণ স্থানে পাথর বা খোয়া ভাঙানোর মেশিন ব্যবহারও নিষিদ্ধ। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যেন নির্মাণ প্রকল্পের দ্রব্যাদি ও জিনিসপত্র জনপথে কিংবা ফুটপাতে রাখা না হয়। কিন্তু এসবের কিছুই মানার কোনো বালাই দেখা যায় না।
এখন কথা হলো, এই বিধি তৈরি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তার বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? এমনিতেই এ দেশে আইন না মানার একটা সহজাত স্বভাব রয়েছে। যদি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে এমন বিধি বাস্তবায়ন খোয়াবই থেকে যাবে। আর যদি বিষয়টি হয় জনস্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে সে ক্ষেত্রে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ না করাটা সভ্যতাবিরোধী।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্মল বায়ু সুস্থ জীবনের পূর্বশর্ত। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণেও কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরি, যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, ফিটনেস পরীক্ষা, নির্মাণকাজের সময় চারপাশ ঢেকে রাখা ও নিয়মিত পানি ছিটানো, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে পরিবহন করা, রাস্তা খোঁড়া এবং এ ধরনের কার্যক্রমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানটি যতদূর সম্ভব ঢেকে রেখে নিয়মিত পানি ছিটানো, বায়ুদূষণকারী শিল্পকারখানাগুলোয় বায়ুদূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাড়ির চারপাশে বনায়ন করা।
ওপরের পরামর্শগুলো ২০১৫ সালের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির বদল যে ঘটেনি, তা বুঝতে গবেষণার দরকার পড়বে না। রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় যেকোনো মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পায়। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একটি সমন্বয় সভা হয়েছে। ২০১৫ সালে গণবিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভার ১১ দফা করণীয় নির্ধারণের মিল রয়েছে। কিন্তু এসব পরামর্শ দিলেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। শক্ত হাতে এসব আইনের বাস্তবায়ন না করলে জনস্বাস্থ্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
উদীয়মান অর্থনীতির এই দেশে সুস্থ জনবল তৈরি এক অপরিহার্য কাজ। বায়ুদূষণের কারণে শুধু যে মানুষের কর্মক্ষমতা কমছে তা নয়, জীবনও হচ্ছে হুমকিগ্রস্ত। পরিবেশ রক্ষার প্রতি আগ্রহ এই দেশে ততটা দেখা যায় না, যতটা রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে রয়েছে। এ-সংক্রান্ত খবরেও তেমন আগ্রহ থাকে না। কিন্তু পরিবেশ তো বিমূর্ত কোনো বিষয় নয়! আমাদের চারপাশই আমাদের পরিবেশ। তা আক্রান্ত হলে আমরাও আক্রান্ত হব। রাস্তার ধুলা তো শুধু রাস্তায় থাকছে না, তা আমাদের ফুসফুস, মস্তিষ্কও আক্রান্ত করছে। তবু কেন আ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Wikipedia
Search results
Popular Posts
-
Human Rights Watch has accused the Jordanian government of summarily deporting hundreds of registered Syrian refugees, despite the poss...
-
Three US geneticists - Jeffrey Hall, Michael Rosbash and Michael Young - have been awarded the Nobel Medicine Prize for shedding lig...
-
Palestinian Authority Prime Minister Rami Hamdallah arrived in the occupied Gaza Strip on Monday, in the latest effort at national reco...
-
Islamic State has claimed responsibility for a shooting that killed at least 50 people and wounded over 400 in Las Vegas early on Mond...
-
চোখের কৃমি লোয়া লোয়া। ফিতের মতো দেখতে। গায়ের বর্ণ সাদা। প্রাণীদেহে পরজীবী হিসেবে বসবাসকারী এমন দীর্ঘ কৃমি সচরাচর দেখা যায় না। নামে চোখের ...
-
ষাটের দশকের কথা। তখন ছিল বাদশাহ্ খালেদের শাসনামল। ওই সময় আধুনিক যন্ত্রপাতির দিয়ে পরিষ্কার কারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জম জম কূপটি। জম...
No comments:
Post a Comment