Sunday, December 24, 2017
সীমান্তে মানব পাচার বাড়ার পেছনে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি
আমেরিকার সীমান্তে মানবপাচার বেড়েছে আগের চেয়ে। আর এর পেছনে বর্তমান ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতিকেই মুখ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকেরা।
ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি তা বাস্তবে রূপ দিতে নিয়েছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ। বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি অভিবাসন ও কাস্টমস এজেন্টদের তৎপরতা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। দীর্ঘদিন আমেরিকায় থাকা অনেকেই শিকার হয়েছেন বিতাড়নের। আর সীমান্তে কঠোর যাচাই-বাছাই তো রয়েছেই। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকা অভিমুখী মানুষেরা মানবপাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তাদের চাওয়া একটাই কোনোমতে সীমান্ত পার করে আমেরিকায় প্রবেশ।
বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশ যখন অভিবাসন নীতি কঠোর করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ওই দেশকে কেন্দ্র করে মানবপাচার চক্রের তৎপরতা বাড়ে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড মার্টিন স্কুলের গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিবেদন মতে, ‘সীমান্তে অতি নিয়ন্ত্রণই মানবপাচারের মুখ্য কারণ। সীমান্ত যত কঠোর হয়, শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে ততই মানবপাচার চক্রের প্রতি আস্থা বাড়ে। কঠোর অভিবাসন নীতিই মূলত মানুষকে এ ধরনের ঝুঁকি গ্রহণে প্ররোচিত করে।’
বর্তমান মার্কিন অভিবাসন নীতিতে মানবপাচারের হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে। এই সীমান্তে মানবপাচারকারীরা ‘কয়োটস’ নামে পরিচিত। এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন ওয়াশিংটন অফিস অন ল্যাটিন আমেরিকার সামরিক পর্যবেক্ষণ বিভাগের পরিচালক অ্যাডাম আইজাকসন বলেন, ‘বর্তমানে কোনো অভিবাসন প্রত্যাশীই কয়োটস কিংবা আমেরিকায় প্রবেশের পথ সম্পর্কে অভিজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবতে পারে না। আর কঠোর অভিবাসন নীতির সুবিধাটি নিচ্ছে মূলত এই মানবপাচার চক্র। বিপুল অর্থের বিনিময়ে তারা ঠিকই মানুষকে আমেরিকায় নিয়ে যাচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাও ঘটছে।’
আমেরিকার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিভাগের তথ্য বলছে, অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মানবপাচারের হার বেড়েছে। এমনকি এই হার ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালেই বাড়তে শুরু করে, যখন ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিতে শুরু করেন। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট ২ হাজার ১১৭টি মানবপাচারের ঘটনা আইসিই শনাক্ত করেছে। অথচ পুরো ২০১৬ সালেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ২ হাজার ১১০ টি। আর এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৮৬ টি।
অন্য সব ক্ষেত্রের মতোই এখানেও চাহিদা ও জোগানের হিসাব মিলিয়ে পাচার চক্র তাদের দাম বাড়িয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনমতে, ২০১৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর মানবপাচার ফি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। সীমান্ত এলাকার ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে সে সময় গড়ে প্রতি জন ব্যক্তিকে আমেরিকায় প্রবেশ করাতে কয়োটস সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ডলার নিত। ২০০৯ সালে এ ফি ছিল জনপ্রতি এক থেকে দুই হাজার ডলার। আর সাম্প্রতিক অন্তত একটি ঘটনায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে মানবপাচারকারীরা ৯ হাজার ২০০ ডলার নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
মানবপাচারকারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রাণসংশয়েরও কারণ হয়ে উঠছে। অনেকেই আমেরিকায় আসতে পাচারকারীদের সহায়তা নিলেও শেষ পর্যন্ত জীবন নিয়ে আসতে পারেন না। ফেডারেল কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ১৯৯৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শুধু দক্ষিণ সীমান্তেই সাত হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী পথেই মারা গেছেন। কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন বিভাগের মুখপাত্র নিউজউইককে বলেন, আমেরিকায় প্রবেশ করতে গিয়ে পথেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের সবাই মানবপাচারকারী চক্রের তৎপরতার শিকার।
গত জুলাইয়েই সান আন্তোনিওতে ওয়ালমার্টের একটি বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে পাওয়া একটি ট্রাক থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এই ১০ জন মূলত মানবপাচারকারী চক্রের শিকার। আর আরও ভালো করে বললে পেছনের মুখ্য কারণটি ওই কঠোর অভিবাসন নীতিতেই।
অ্যাডাম আইজাকসন বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পানিশূন্যতার কারণেই এসব ব্যক্তি মারা পড়েন। পাচারকারী চক্র এসব ক্ষেত্রে মরদেহ রেখে সটকে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টি নির্ভর করে পাচারকারীকে কত দেওয়া হয়েছে, তার ওপর। উচ্চ মূল্য পরিশোধ করলে, মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় আসতে দুই দিনের মতো সময় লাগে। আর কম মূল্যের ক্ষেত্রে যাত্রাপথের বিড়ম্বনা বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে হাঁটতে হয় প্রচুর। এমনকি নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়। আর নিশ্চিতভাবেই সীমান্ত এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ছেড়ে পাচারকারীরা সটকে পড়ে, কোনো দায়িত্ব না নিয়েই।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Wikipedia
Search results
Popular Posts
-
Human Rights Watch has accused the Jordanian government of summarily deporting hundreds of registered Syrian refugees, despite the poss...
-
Three US geneticists - Jeffrey Hall, Michael Rosbash and Michael Young - have been awarded the Nobel Medicine Prize for shedding lig...
-
Palestinian Authority Prime Minister Rami Hamdallah arrived in the occupied Gaza Strip on Monday, in the latest effort at national reco...
-
Islamic State has claimed responsibility for a shooting that killed at least 50 people and wounded over 400 in Las Vegas early on Mond...
-
চোখের কৃমি লোয়া লোয়া। ফিতের মতো দেখতে। গায়ের বর্ণ সাদা। প্রাণীদেহে পরজীবী হিসেবে বসবাসকারী এমন দীর্ঘ কৃমি সচরাচর দেখা যায় না। নামে চোখের ...
-
ষাটের দশকের কথা। তখন ছিল বাদশাহ্ খালেদের শাসনামল। ওই সময় আধুনিক যন্ত্রপাতির দিয়ে পরিষ্কার কারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জম জম কূপটি। জম...
No comments:
Post a Comment