Saturday, December 23, 2017

এক থেকে দেড় কোটি টাকায় চাই ফ্ল্যাট





অধিকাংশ ক্রেতাই মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট খুঁজছেন। মাঝারি মানে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট। দাম এক থেকে দেড় কোটি টাকার মধ্যে। ছোট আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদাও আছে। তবে আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছে মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের সংখ্যাই বেশি।

ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাবের আবাসন মেলা চলছে। মেলায় অংশ নেওয়া কয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদার বিষয়টি জানা গেল। তাঁরা বলেন, গত এক-দেড় বছরে ফ্ল্যাটের বেচাবিক্রি বেড়েছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্ল্যাটের দামও ৫-১০ শতাংশ বেড়েছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই রিহ্যাবের আবাসন মেলায় ভিড় বাড়তে থাকে। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টলে ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাট ও প্লটের খোঁজখবর নিয়েছেন। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে অনেকেই সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও সেটির ব্যবস্থা করছেন।

এবারের আবাসন মেলায় কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংস ২৭টি প্রকল্পের ১৬০টি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য প্রদর্শন করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্পগুলো রাজধানীর লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, সেন্ট্রাল রোড, মিরপুর, জিগাতলা, নাজিম উদ্দিন রোড, উত্তরা ও বনানী এলাকায়। কমপ্রিহেনসিভের সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোর প্রতি বর্গফুটের দাম প্রকল্পভেদে ৭ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক (উদ্ভাবন ও পরিকল্পনা) কাজী সামসুল আলম বলেন, ‘ক্রেতাদের অর্ধেকই ১,২০০-১৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট খুঁজছেন। মাঝারি আকারের পর্যাপ্ত ফ্ল্যাট থাকায় আমরা চাহিদা মেটাতে পারছি।’ মেলা উপলক্ষে প্রতি বর্গফুটে ৩০০-৪০০ টাকা ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
অ্যাসুরেন্স ডেভেলপমেন্টস ২১টি প্রকল্পে এক হাজারের বেশি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য এনেছে। তাদের ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ১৯০ বর্গফুট থেকে ২ হাজার ৬৬৫ বর্গফুট। আর প্রতি বর্গফুটের দাম সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অ্যাসুরেন্সের ফ্ল্যাটগুলো উত্তরা, বারিধারা, গুলশান, বনানী, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও বংশাল এলাকায়। মহাখালীর আমতলী এলাকায় তাদের একটি বাণিজ্যিক স্পেসের প্রকল্প আছে। প্রতি বর্গফুটের দাম ৬০ হাজার টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (বিক্রয়) কাজী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রেতারা এক থেকে দেড় কোটি টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট কিনতে চান। একই সঙ্গে তাঁরা রেডি ফ্ল্যাট চাইছেন। আমরা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছি। মেলায় এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।’
খেলার মাঠ, বিদ্যালয়, ব্যায়ামের জায়গা, ক্লাব হাউসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মিরপুরের পুলিশ কনভেনশন হলের পেছনে ৫০ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে উঠছে বিজয় রাকিন সিটি। সেখানে ১৫টি ভবনে আছে ১ হাজার ৯০০ ফ্ল্যাট। এসব ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ৫৫৩ ও ১ হাজার ৮৭২ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৬ হাজার ২০০ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মাহবুব আলম বলেন, ‘বিজয় রাকিন সিটির ৮৫ শতাংশ ফ্ল্যাট ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো মেলায় বিক্রি করছি। আগামী জুন থেকে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর শুরু হবে। ক্রেতাদের কাছে ভালো সাড়া পাওয়ায় কাঁচপুরে আমরা ১৫০ বিঘা জমিতে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’
মিরপুর, বসুন্ধরা ও উত্তরা এলাকার তিনটি প্রকল্পের ৩৬টি ফ্ল্যাট এবং পূর্বাচল ও মাওয়া রোডের প্লট বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্ট। মিরপুরে তাদের ১ হাজার ৪১০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম ৪ হাজার ২০০ টাকা। উত্তরা ও বসুন্ধরায় ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে এশিয়ানের। উত্তরায় প্রতি বর্গফুটের দাম ৮ হাজার ও বসুন্ধরায় প্রতি বর্গফুট ৬ হাজার ৫০০ টাকা। পূর্বাচলের প্রতি কাঠা জমির দাম ৮-১০ লাখ ও মাওয়ায় প্রতি কাঠা সাড়ে ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করছে এশিয়ান। এ ছাড়া পূর্বাচল এলাকায় ৫ কাঠা জমিসহ দোতলা বাড়ি আছে তাদের। প্রতিটির দাম দেড় কোটি টাকা।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) সবুজ হোসেন গতকাল দুপুরে বলেন, ‘আমরা মেলায় মিরপুরের প্রকল্পের একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছি। আরও কয়েকজন আমাদের প্রকল্প দেখে এসেছেন। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে।’
১১৬টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রিহ্যাবের আবাসন মেলায় আছে ১২টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ফলে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ নেওয়ার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন অনেকে। আবার ঋণের জন্য প্রাথমিক আবেদনটিও সেরে ফেলছেন অনেকে।
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য ১০ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা ঋণ দেয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে জেলা পর্যায়ে ১০ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ ও উপজেলা পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা ঋণ দেয় সরকারের এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ দেয় তারা।
জানতে চাইলে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের কর্মকর্তা জোবায়েদা খাতুন বলেন, ফ্ল্যাট ও বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ নিতে হলে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ একটি প্রাথমিক আবেদন করতে হয়। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই চূড়ান্ত আবেদন করতে হয়। তিনি বলেন, আগের চেয়ে সহজ ও দ্রুত সময়ে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করছে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।
রিহ্যাবের আবাসন মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। একবার প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা আর পাঁচবার প্রবেশের জন্য ‘মাল্টিপল টিকিট’ ১০০ টাকায় পাওয়া যাবে। টিকিটের অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। প্রবেশ টিকিটে র‍্যাফল ড্র হবে। সেখানে প্রথম পুরস্কার থাকছে একটি প্রাইভেট কার। মেলা শেষ হবে সোমবার।

No comments:

Post a Comment

Wikipedia

Search results

Popular Posts