Saturday, December 23, 2017

‘আমার চলাফেরা দেখতে পারেন না শাশুড়ি’




সমস্যা

আমার বয়স ৩৪ বছর। বিয়ে হয়েছে সাড়ে চার বছর। আড়াই বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। শুরু থেকেই স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই অপছন্দ করে। বাবার বাড়ি যেতে দেয় না। যৌতুকের জন্যও জোরাজুরি করে। মোট কথা, আমার খাওয়া, চলাফেরা দেখতে পারে না আমার শাশুড়ি। এখন মেয়ে বড় হয়েছে, তার সামনেই আমাকে অপমান করে। এমনকি মেয়েকেও সহ্য করতে পারে না। ওকে কেন খাওয়াতে এত সময় দিই, তা তার ছেলের কাছে নালিশ করে। আমার স্বামীও আমাকে বোঝে না, যা আমাকে খুব পীড়া দেয়।

ইদানীং এই মাত্রা আরও বেড়েছে। আমার এখন প্রায়ই মন খারাপ থাকে। অভিযোগ শুনতে শুনতে নিজেকে ভারসাম্যহীন মনে হয়। আমি এখন কী করব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

চিঠি পড়ে বুঝতে পারছি, সাড়ে উনত্রিশ বছর বয়সে তোমার বিয়ে হয়েছে। তুমি লেখাপড়া কতটুকু করেছ, সেটি জানালে ভালো হতো। আমাদের দেশের মেয়েরা লেখাপড়া শিখে উপার্জনক্ষম হতে পারলে এভাবে নিগৃহীত হতে হতো না। দুঃখজনক হচ্ছে, তাঁদের অভিভাবকেরাও এ ব্যাপারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সচেতন থাকেন না বলে কন্যাসন্তানটিকে উচ্চশিক্ষার জন্য খুব উৎসাহিত করেন না। এতে করে অনেক মেয়ে আত্মসম্মান বোধের অভাবে খুব অসহায়ভাবে বড় হতে থাকে।

তোমার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়ের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। তোমাকে যদি নিজের বাবার বাড়ি অর্থাৎ যেখানে তুমি জীবনের একটি বড় সময় কাটিয়েছ, সেখানেই যেতে না দেয়, তাহলে নিজেকে মানসিকভাবে ভালো রাখবে কেমন করে? এটি তোমার একটি মৌলিক অধিকার হওয়া সত্ত্বেও তুমিও মনের শক্তি ব্যবহার করে ভদ্রতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে অধিকার আদায় করতে পারছ না। কারণ, এই জীবনদক্ষতাগুলো শেখার ক্ষেত্রে আমাদের পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সফল হতে পারেনি। এ ছাড়া যৌতুকের জন্য তোমাকে যেভাবে অসম্মান করা হচ্ছে, তা সত্যিই খুব অনাকাঙ্ক্ষিত।

তোমার স্বামী যদি এই অসহায় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে কিছুটা সহায়তা দিতে পারতেন, তাহলে খুব ভালো হতো। তিনি কি মায়ের খুব বেশি ভক্ত বলে এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলেন না? বিশেষ করে শাশুড়ি যখন তোমার মায়ের প্রসঙ্গে কথা বলছেন, তখন স্বামী তাঁর মাকে কিছু বলতে না পারলেও যদি তোমার কষ্টের সঙ্গে সহমর্মী হতে পারতেন, তাহলে নিজেকে সামলে নিতে তোমার অনেক সুবিধা হতো।

যে সন্তানটি এই পরিবারে বড় হচ্ছে, সে যখন ক্রমাগত তার মাকে বিষণ্ন হতে দেখছে, তখন তার মানসিক গঠনের ওপরেও তো এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ওর ছোট্ট মস্তিষ্কে যে ছাপগুলো পড়ছে, সেটি কিন্তু পরবর্তী জীবনে ওকেও বিষণ্নতায় ভোগাতে পারে।

তুমি বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে পারো। বিশেষ করে যেহেতু সে একটি মেয়ে সন্তান, তার জন্য নিজের মাকে অসম্মানিত হতে দেখাটা একেবারেই অনভিপ্রেত। এতে করে তার পক্ষে আত্মসম্মান বোধ নিয়ে বড় হওয়াও কঠিন হতে পারে।

আমি তোমাকে অনুরোধ করব, সন্তানটি আরেকটু বড় হলে তুমি নিজেকে আরও যোগ্য করে তুলে বাইরে কোনো কাজ করার প্রস্তুতি নিতে পারবে। মেয়েরা যখন নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, তখন তাদের কন্যাসন্তানেরাও সেটি দেখে নিজেদের সাফল্য অর্জনের পথে এগোতে উৎসাহিত হয়। তোমারও বিষণ্নতা তাতে যে কিছুটা কাটবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

No comments:

Post a Comment

Wikipedia

Search results

Popular Posts